
টিপ আর বাঙালি নারীর কপাল যেন অবিচ্ছেদ্য। কয়েক বছর পরপর ফ্যাশন ট্রেন্ডে পরিবর্তন আসে। কিন্তু যুগ যুগ ধরে টিপের ফ্যাশন মোটামুটি একই। ডিজাইনে কিঞ্চিৎ ভিন্নতা থাকলেও হাল ফ্যাশন থেকে টিপ কখনোই বিচ্যুত হয়নি। শুধু শাড়ি আর সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে নয়, পশ্চিমা পোশাকের সঙ্গেও টিপ পরেন অনেকেই। কপালে এক টুকরো রঙের মহিমা বাঙালি নারী ছাড়া আর কারাই বা বুঝেছে।
মুখের সৌন্দর্য পরিপূর্ণভাবে ফুটিয়ে তোলে টিপ। তাই এটি নির্বাচনে সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। মুখের গড়নটা এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য। তবে নিজের পছন্দের প্রাধান্য জরুরি। মুখের গড়ন অনুযায়ী টিপ পরলে তা ভালোভাবে ফুটে ওঠে। কেউ কেউ পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে টিপ পরে, কেউ এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালোবাসে। বাজারে এখন নানা ডিজাইনের, আকারের ও রঙের টিপ পাওয়া যায়। তবে কিনতে হয় সেটিই, যেটা মানিয়ে যাবে। কপালের টিপ নির্বাচনে খেয়াল রাখতে হবে মুখের গড়ন এবং পোশাকের ধরন ও রঙ।
প্রথমে জেনে নিন কোন ধরনের চেহারার সঙ্গে কোন আকারের টিপ মানানসই।
গোল মুখ
চেহারার গোলত্ব কমানোর জন্য একটু লম্বাটে টিপ পরতে হয়। এ ক্ষেত্রে খুব বড় টিপ এড়িয়ে যাওয়া ভালো।ডিম্বাকৃতি
ডিম্বাকৃতি মুখে কপাল ও চিবুকের শেপ অনেকটা একই রকম হয়, ফলে যেকোনো ধরনের টিপ দিব্যি মানিয়ে যায়। বড় টিপে মুখের আকৃতি বড় মনে হয়, তাই খুব বড় টিপ না পরাই ভালো।পান আকৃতি
মুখে কপালের অংশ তুলনামূলকভাবে চওড়া হয়, তাই বড় টিপ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। লম্বাটে টিপও এ ধরনের মুখ বড় করে তোলে, তাই এটা না পরাই ভালো। এই শেপে ছোট টিপ বেশি মানানসই।ত্রিকোণ
এ ধরনের মুখে কপালটা বেশ ছোট দেখায়, তাই যেকোনো আকারের যেকোনো টিপ এই মুখের আদলে সুন্দর মানিয়ে যায়।
টিপ সবচেয়ে বেশি মানানসই দেশীয় পোশাকের সঙ্গে। পাশ্চাত্য পোশাকেও মানিয়ে নেয়া যায়। সুতি শাড়ির সঙ্গে টিপ খুব মানানসই। শাড়ির রঙে মিলিয়ে টিপ পরা যায়। নিমন্ত্রণে যাওয়ার পোশাকের সঙ্গে অর্নামেন্টাল টিপ বেশি ভালো দেখায়। অন্য দিকে সারা দিনের ব্যস্ততায় ছোট গোল বা লম্বা টিপ ব্যবহার করাই ভালো।
এখনকার টিপের ডিজাইনেও রয়েছে ভিন্নতা-
গোল টিপ
আদিকাল থেকে কুমকুমের টিপের সঙ্গে সঙ্গে চলে এসেছে গোল টিপের চল। বিবাহিত হিন্দু নারীরা সিঁদুরের টিপ পরতেন কপালে, যা এখনো রয়েছে। বাজারে পাওয়া যায় রেডিমেড টিপ, টিপের পাতা কিনে তা থেকে একটি তুলে কপালে বসিয়ে নিলেই হয়ে গেল। বর্তমানে বিভিন্ন রঙের টিপ পাওয়া যাচ্ছে। লাল, কালো, সবুজ, হলুদ, নীলের মতো একরঙা টিপের পাতা সর্বত্রই সহজলভ্য।ফ্যাশনেবল পাথরের টিপ
কপালে টিপ আছে কি নেই, বোঝা যায় না, শুধু মাঝে মাঝে ঝিলিক দিচ্ছে। পাথরের টিপ এমনই। এটা ছোট হয়ে থাকে সাধারণ আকৃতির তুলনায়। একরঙা বা বহুরঙা পাথরের টিপ দুর্লভ কিছু নয়। অনুষ্ঠানে পরার জন্য বেশ জুতসই।মিশ্রণ
ব্যতিক্রমী সাজের জন্য ফ্যাশনপ্রেমী মেয়েরা দু-তিন ধরনের টিপ মিলিয়ে পরেন। যেমন পাথরের টিপ কিংবা সাধারণ গোল টিপের সঙ্গে এঁকে নেন আলপনা, আবার দু-তিনটি টিপ একসঙ্গে পরলেও ভিন্নতা আসে সাজে।দুই টিপ একসঙ্গে
দুটি আলাদা রঙের টিপ একটির ওপর অন্যটি দিয়ে পরা যায় কপালে। সাধারণ বড় একটি টিপের নিচে ছোট টিপে সাজানো যায় কপাল, পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে।কুমকুম/রঙ
নিজের সৃষ্টিশীলতা দিয়ে কপালটিকে সাজাতে পারলে আরও ভালো। রেডিমেড টিপ নয়, রঙিন কুমকুম বা রঙ দিয়ে, ইচ্ছামতো ডিজাইন অনুযায়ী সাজিয়ে নিলে চেহারায় আলাদা সৌন্দর্য সৃষ্টি হতে পারে।ফুটপাত থেকে শপিং মল- সবখানেই এখন টিপ পাওয়া যায়। দামও হাতের নাগালে। দশ টাকা থেকে শুরু করে নানা দামে টিপ পাওয়া যায়। তবে একটু ভিন্ন ডিজাইনের জন্য ঢুঁ মারতে হবে ধানমন্ডির বিবি প্রোডাকশন্সে ও শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে। কাপড়ের টিপও পাওয়া যায়। বিবি প্রোডাকশন্সে পাওয়া যায় গোল, রঙিন টিপ। একরঙা টিপের ওপর আঁকা রঙিন ফুল কিংবা আস্ত এক সূর্য বাঙালি নারীর সাজকে পরিপূর্ণ করবে বৈকি!
মনে রাখার জন্য
কানের দুল যদি বড় হয়, তাহলে টিপটা ছোট পরলেই ভালো দেখাবে অনেক সময় টিপের আঠার কারণে কপালে র্যাশ দেখা দেয়। সেই সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য টিপ খোলার পরই বেবি অয়েল দিয়ে আঠা মুছে ফেলুন
কেনার সময় খেয়াল করে দেখে নিন, আঠা টিপের অনেকটা অংশজুড়ে লাগানো আছে কি না
ভেজা আবহাওয়ায় স্টিকার টিপ পরুন
বৃষ্টির দিনে কিংবা যদি খুব বেশি ঘামার প্রবণতা থাকে, তাহলে কুমকুম বা আলপনা ব্যবহার না করাই ভালো
সুরবি প্রত্যয়ী
মডেল: রোজ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস
সূত্রঃ ক্যানভাস
No comments:
Post a Comment