Monday, 13 June 2016

ট্রেন্ডি আংটি

দেশের গণ্ডিতে এক সময় আংটি ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহার করত বিবাহিত নারীরা। তাও সোনার বাইরে নয়। সময়ের সঙ্গে মানুষের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিচরণ বদলে দিয়েছে সেই রীতি। আঙুলের স্টাইলিশ আংটি এখন তরুণীদের নিয়মিত সজ্জায় চোখে পড়ে। আঙুলে আংটি থাকা চাই চুড়ি, টিপের মতোই। সোনার থেকে বেরিয়ে এসে বদলে গেছে মেয়েদের ম্যাটেরিয়াল রুচিও। কাঠ, পিতল, পুঁতি, মুক্তা, পাথরের মধ্যেই এখন রয়েছে ট্রেন্ডি ডিজাইনের আংটি। আংটির ডিজাইনেও প্যাটার্নের প্রাধান্যতা পরিলক্ষিত। একটু বড় আকারের আংটি এখন ফ্যাশনে ইন।  আভিজাত্য চলে আসতে পারে এতেই। ফ্যাশনে নতুন কিছুর কদর থাকে সব সময়ই। একসময় সোনা কিংবা হীরার আংটিতে মেয়েদের উৎসাহ থাকলেও আজকাল নানা উপাদানে তৈরি হচ্ছে আংটি। ডিজাইনেও এসেছে অভিনবত্ব। আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক—যেকোনো জায়গাতেই মানিয়ে যাচ্ছে এগুলো।

বাজার ঘুরলেই চোখে পড়ে বিভিন্ন নকশা ও আকারের আংটি। অ্যান্টিক, ব্রোঞ্জ, রুপা, পাথর, পুঁতি, গোল্ড প্লেটেড, ডায়মন্ড কাট, অক্সিডাইজড, বেত ও কাঠের তৈরি আংটি পাওয়া যাচ্ছে। নতুনত্ব আনতে আংটির আকৃতিও বদলে গেছে। ত্রিভুজাকৃতি, ডিম্বাকৃতি, গোলাকার, চৌকোণা, গম্বুজাকৃতি এমন পশুপাখির মুখের আদলেও আংটি পাওয়া যাচ্ছে।

বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসের এক্সেসরিজ সেকশনে দেখা মেলে ট্রেন্ডি এবং ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের আংটি। ফ্যাশনকে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে অনুসরণ করতে গিয়েই আংটির এমন চল বলে মনে করেন ফ্যাশন হাউস ক্যাটস আইয়ের ডিজাইনার সাদিক কুদ্দুস। তিনি বলেন, পোশাকের সঙ্গে এক্সেসরিজও এখন ট্রেন্ডি। এই রীতি শুধু একটি-দুটি দেশে নয়। সমগ্র বিশ্বে এ পরিবর্তন একই সঙ্গে আসে। সেই ধারায় এখন একটু বড় আকৃতির আংটির চল এসেছে।
মেয়েদের ট্রেন্ডি পোশাকের সঙ্গে মিল রেখেই করা হয় এ আংটিগুলোর ডিজাইন। তাই লং কামিজ, কুর্তা, ফতুয়া, টপসের সঙ্গে এ ধরনের আংটি একদম মানানসই। পরা যেতে পারে শাড়ি, আভোয়া, হিজাবের সঙ্গেও। তবে আংটির ডিজাইনে রয়েছে কয়েক ধরন। মূলত মোটিফ থেকেই পরিবর্তন আসে নকশার। নকশাগুলোতে মিলবে ঐতিহ্যের ছোঁয়া, ফুলেল মোটিফ, মুকুট, মুখচিত্র। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাথরের মতো ম্যাটেরিয়ালের সমান লম্বা প্যাটার্ন। আর দেশি পোশাকের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী নকশার আংটিই বেশি মানানসই। ফুলেল বেশি মানানসই সিল্ক, জামদানি শাড়ি এবং টপসের সঙ্গে। একটু পশ্চিমা লুকের জন্য মুকুট, মুখচিত্রের মতো নকশা ঠিকঠাক। কিছু আংটির নকশায় দেখা মিলবে মজার কিছু বার্তা। তার মধ্যে আছে ফলের আকৃতি, চিঠির খাম, রেডিও, মিউজিক্যাল লোগো, বাটারফ্লাই প্রভৃতি। মুখচিত্রের মধ্যে চলে আসছে চে গুয়েভারা, সুচিত্রা, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, ভার্সেজের মতো জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব।


আংটির রঙের ক্ষেত্রেও দেখা যায় ভিন্নতা। মোটেই চাকচিক্যের দেখা নেই কোনো ডিজাইনে। অ্যান্টিক মেটাল এবং ডার্ক কালারের মধ্যেই দেখা যায় বেশিরভাগ নকশা। তাই ড্রেসআপের সঙ্গে ঠিক কালার রেখে ব্যবহার করতে হবে এমন আংটি। এ ক্ষেত্রে পোশাকের সঙ্গে না মিলিয়ে বরং তার বিপরীত রঙের মধ্যে নেওয়াই মানানসই। পোশাক ও গহনা দুটিই জমকালো হলে ভালো দেখায় না। তাই পোশাক ও অনুষঙ্গের মধ্যে সব সময় ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত। একটি জমকালো হলে আরেকটি হওয়া চাই সাধারণ। তবে অন্যান্য এক্সেসরিজের সঙ্গে মিল থাকতে পারে আংটিরও। এ ক্ষেত্রে খুব মোটা বালা, চুড়ি না পরাই ভালো। পরলেও তা হতে হবে খুব সাদামাটা, ছিমছাম। তবে চাইলে অন্য হাতে ঘড়ির মতো বড় এক্সেরিজও মানানসই হবে। লম্ব্বা আঙুলে এ ধরনের আংটি দেখতে খুব সুন্দর। যাদের হাত বেশি রোগা এবং আঙুলগুলো ছোট, তাদের বড় আংটি এড়িয়ে যাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের। তাদের ক্ষেত্রে উঁচু আংটি না পরে বড় কিন্তু সমতল নকশার একটি বেছে নেওয়া ভালো হবে।


চোখে পড়ে আংটির প্যাটার্নে বৈচিত্র্যও। তার মধ্যে বেশির ভাগই জ্যামিতিক আকারের বাইরে। তবে গোলাকার, চার কোণ, ত্রিকোণাকৃতির নকশাও রয়েছে বেশ। বড় আকৃতির এ আংটিগুলোর প্রায় সবই রুপা, পাথর, কাঠ, মুক্তা ও মিনা করা ডিজাইনের। নকশায়ও রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। আকারে বড় হলেও তা যেন হয় আরামদায়ক সে চিন্তা করেই নকশা করা হয়। যেমন কাঠের বড় আংটিগুলো দেখতে ভারী মনে হলেও তা আসলে অনেক হালকা। আকারে বড় হলেও যেন কাজের সময় অসুবিধা না হয়, সে কথা মাথায় রেখেই আংটিগুলোর নকশা করা হয়েছে।



ফতুয়া-জিনসের মতো পাশ্চাত্য পোশাকের সঙ্গে নানা রঙের জিগজ্যাগ আংটিও বেশ মানিয়ে যায়। এক্ষেত্রে বড় আংটির সঙ্গে হাতভর্তি চুড়ি পরলে ভালো দেখাবে না। বদলে ব্রেসলেট বা খালি হলেই সুন্দর দেখাবে। জমকালো অনুষ্ঠানে সোনার প্রলেপ দেওয়া আংটি পরতে পারেন। এতে থাকতে পারে কুন্দন ও পাথরের কারুকাজ। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ উভয়ের সঙ্গেই মানিয়ে যায় এ আংটিগুলো। রঙিন মিনা করা আংটিও পরতে পারেন। এ সময়ে বেশ চলছে ডায়মন্ড কাটের আংটিগুলো। ফতুয়া ও জিনসের সঙ্গে দেশি ঢঙের রঙিন পুঁতি, নারিকেলের মালা, বোতাম বা একটি বড় পাথরের বড় একটি আংটি বেশ ভালো লাগবে।


 --সংগৃহীত

No comments:

Post a Comment